নভেম্বর- ডিসেম্বর এই দুই মাসে জিয়া পরিবারের তিন সদস্যের অ্যাকাউন্টে অন্তত ২৫০ কোটি টাকা জমা পড়েছে। সারা বিশ্বের অর্থপাচার তদারকি করার প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল মানি লন্ডারিং ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
ইন্টারন্যাশনাল মানি লন্ডারিং ইন্টেলিজেন্স অনুসন্ধান করে দেখেছে, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর- এই দুই মাসে জিয়া পরিবারের তিন সদস্যের নামে চারটি দেশে ২৫০ কোটিরও বেশি টাকা জমা পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মনোনয়ন বাণিজ্যের টাকাই তারেক জিয়া তার নিজের অ্যাকাউন্টে না রেখে অন্যান্য অ্যাকাউন্টে জমা রেখেছেন। যাদের নামে এই বিপুল পরিমান অর্থ পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন তারেক জিয়ার স্ত্রী জোবায়দা রহমান, তারেক জিয়ার কন্যা জাইমা রহমান এবং প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মীলা রহমান সিঁথি। যে চারটি দেশে এই বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া গেছে তা হলো সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং দুবাই। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, এই বিষয়ে তদন্ত শেষ করে একটি রিপোর্ট ইন্টারপোলের কাছে দেওয়া হতে পারে। অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, প্রয়াত কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মীলা রহমানের নামে মালয়েশিয়ার একটি অ্যাকাউন্টে নভেম্বর মাসের ১৯ তারিখে বাংলাদেশি ১৭ কোটি টাকা জমা হয়েছে, অন্য একটি অ্যাকাউন্টে ডিসেম্বরের ১ তারিখে বাংলাদেশি ৮ কোটি টাকা জমা হয়েছে। জমা হিসেবে বলা হয়েছে, ব্যাবসায়িক মুনাফার টাকা। সৈয়দা শর্মীলা রহমান সিঁথি কোন ব্যবসা করেন কিনা সে সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে ব্যাংকক, পরে মালেয়েশিয়ায় গেলে সেখানেই আরাফাত রহমান কোকো ও সৈয়দা শর্মীলা রহমান বসবাস শুরু করেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারীতে কোকোর মৃত্যুর পর সৈয়দা শর্মীলা রহমান তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে লন্ডনে পাড়ি জমান। সেখানে তার সন্তানরা পড়াশুনা করছে। হঠাৎ করে তার দুই অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমান অর্থ কীভাবে এলো সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তারেক জিয়ার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের নামে দুবাইয়ের আবুধাবিতে একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সেই অ্যকাউন্টটিতে গত ৬ নভেম্বর ৪ কোটি টাকা, ১২ নভেম্বর ৮ কোটি টাকা এবং ২৮ নভেম্বর ৩২ কোটি টাকা জমা পরেছে। এগুলো ব্যাবসার লভ্যাংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
হঠাৎ করে এই দুই মাসে এমন বিপুল পরিমান টাকা কীভাবে জমা হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একইভাবে তারেক জিয়ার একমাত্র মেয়ে জাইমা রহমানের নামে সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংক ৩ নভেম্বর ৬ কোটি, ১৪ নভেম্বর ১৬ কোটি এবং ২৯ নভেম্বর ৩২ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এসব টাকার উৎস ব্যাবসা এবং পড়াশুনার জন্য ঋণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। একইভাবে জাইমা রহমানে
র নামে লন্ডনের অ্যকাউন্টে নভেম্বর এবং ডিসেম্বরের হিসেবে দেখা যায়, নভেম্বর মাসে মোট চারবার তার অ্যকাউন্টে ৩ হাজার ও ৪ হাজার পাউন্ড প্রথমে। পরে আবার ৩ ও ৫ হাজার পাউন্ড জমা হয়। এই টাকাগুলো সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, আত্মীয় স্বজনের অনুদান এবং শিক্ষা খরচ।
মানি লন্ডারিং ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সূত্রগুলো বলছে, ২০০৭ সাল থেকে তারেক জিয়ার বৈধ আয় নেই। আয় ছাড়া তিনি কীভাবে চলছেন সেটা নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে, তারচেয়েও বড় প্রশ্ন হলো নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তার পরিবারের কাছে কীভাবে গেল? সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, এই টাকাগুলো ঐ দেশের বাসিন্দারাই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন। প্রত্যেকবার টাকা জমা দেওয়ার আগে একটি অস্থায়ী চুক্তিপত্রের মাধ্যমে ব্যাবসায়িক লেনদেনের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে বলে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে।
উল্লেখ্য যে, ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তোলা হয়। যে বাণিজ্যের নেতৃত্ব দেন তারেক জিয়া। বিভিন্ন মহল মনে করছে যে, মনোনয়ন বাণিজ্যের যে অর্থ, সেই অর্থই তারেক জিয়া তার বিভিন্ন নিকটজনের অ্যাকাউন্টে জমা রেখেছেন। সবচেয়ে মজার তথ্য হলো, এরমধ্যে তারেক জিয়ার নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোন টাকা জমা হয়নি।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন