সোনামসজিদ স্থলবন্দরে শ্রমিক সংগঠনের নামে একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। স্থলবন্দরে চাঁদাবাজির ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে । এ বন্দরে ব্যবসায়িক পরিবেশ ফেরাতে চাঁদাবাজি বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ব্যবসায়ীরা ।

জানা গেছে, এ বন্দরে আমদানি-রফতানি কম হওয়া ও শ্রমিকদের নামে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বেপরোয়া চাঁদাচাজির কারণে চরম অর্থাভাবে দিন যাপন করছেন সাধারণ শ্রমিকরা। অন্যদিকে আমদানিকারকদেরও চাঁদার টাকা গুনতে নাভিশ্বাস অবস্থা। দিনের পর দিন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে চাঁদাবাজি চালিয়ে গেলেও প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। রাজনৈতিক প্রভাব ও নেতাদের প্রশ্রয়ে চাঁদাবাজি চলছে এমন অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা । তবে ব্যবসায়ী সংগঠনের দায়িত্বশীল কেউ গণমাধ্যমে নাম প্রকাশে রাজি হচ্ছেন না। এ পরিস্থিতিতে বন্দরের ব্যবসায়ীক পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আমদানি ও রফতানিকারকরা।

বন্দরের শ্রমিক মুখলেস সর্দার জানান, এ বন্দরে মোট ১৭৩টি শ্রমিক দল রয়েছে। প্রতিটি দলে ৭টি করে শ্রমিক সে হিসেবে প্রায় ১১শ’ শ্রমিক রয়েছে। দিনের শেষে শ্রমিকরা মাত্র ৬০ খেকে ৭০ টাকা পারিশ্রমিক পান। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন থেকে চরম কষ্টে কাটছে বন্দর শ্রমিকদের দিন।
সোনামসজিদ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারন সম্পাদক ইসমাইল হোসেন জানান, এই বন্দরে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে ২০১৪ সালে সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালিন অর্থবিষয়ক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নিহত হন । হত্যা মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে । এ স্থলবন্দরে চাঁদাবাজির ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের মাঝে ব্যপক উত্তেজনা বিরাজ করছে । যে কোন সময় হতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ । তিনি জানান, বিএনপির একাধিক মামলার আসামি ও নেতা-কর্মীরা ভূয়া নামধারী সংগঠন, স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ গঠন করে লাগামহীনভাবে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন। যারা প্রতিবাদ করছেন, তাদের মিথ্যা মামলায় জড়ানোর ভয় দেখাচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ নামে একটি সংগঠনের নাম ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রায় ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করছেন। এ সংগঠনটির নেতৃত্বে রয়েছে সাদিকুর রহমান মাস্টার ও সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের অর্থ সম্পাদক মুনিরুল হত্যা মামলার অন্যতম আসামী সেনাউল ইসলাম মেম্বার। মূলত এ দু’জনের নেতৃত্বেই চলছে শ্রমিক সংগঠনের নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি।

প্রতিদিন আদায়কৃত চাঁদার টাকা পঁচিশ সদস্যের কথিত বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ, ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও বিএনপি জামায়াতের ক্যাডারদের মাঝে ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে। সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন তার ফেসবুক টাইমলাইনে বন্দরে চাঁদাবাজি নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ৩১ টি কুলি সংগঠন ২০০৩ সালে শ্রমিক সমন্বয় নামে ৬১ সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি গঠন করেন । স্থলবন্দর শ্রমিক সমন্বয় সংগঠনটি ২০০৭ সালে বাংলাদেশ স্থলবন্দ শ্রমিক লীগ নামে নামকরন করেন। বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ নামে নামধারী সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি হারুন অর রশিদ।

ভারতীয় ট্রাক চালক ও আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতীয় ট্রাক জিরো পয়েন্টে প্রবেশ পথেই শ্রমিক সংগঠনের নামে নেওয়া হচ্ছে ৬০০ রুপি। সোনামসজি কাস্টম হাউজের তথ্য মতে, প্রতিদিন প্রায় ৩০০ ভারতীয় ট্রাক আসছে বাংলাদেশে, প্রতিটি ট্রাক থেকে ৬০০ টাকা নেন সে হিসেবে প্রতিদিন ভারতীয় ট্রাক থেক চাঁদা আদায় করছেন প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। ভারতীয় ৩০০ ট্রাক আনলোডের পর বাংলা ট্রাকে আনুমানিক ৪০০ ট্রাক হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ছেড়ে যাওয়া এসব ট্রাকেও কথিত এই শ্রমিক সংগঠনের নামে নেওয়া হচ্ছে ৮০০ টাকা।

সে হিসেবে বাংলাদেশি ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করেন প্রায় ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। সম্পূর্ণ অবৈধ সব মিলিয়ে দৈনিক ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ ।

জানা গেছে, ১নং স্কেলে ঢুকতেই ভারতীয় ট্রাক থেকে, স্থলবন্দর লীজগ্রহিতা প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংয়ের ভিতরে প্রবেশের পরে, লোড-আনলোড ও পানামা থেকে বের হওয়ার সময় এই চারটি পয়েন্টে চাঁদা আদায় করে এ সংগঠনটি। নিয়মানুযায়ী শ্রমিকদের জন্য পানামা কর্তৃপক্ষ সিএন্ডএফ এজেন্টদের কাছে প্রতি টন পণ্যের বিপরীতে ৪২ টাকা নেন। এই টাকার মধ্যে নির্ধারিত ২৩ টাকা করে প্রদান করেন শ্রমিকদের।

সোনামসজিদ স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সচিব মোখলেশুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি । তার পক্ষে এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান তিনি ।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজাদ হোসেন জানান, আমাদের সংগঠন চাঁদাবাজির সংগঠন নয় । কেউ যদি এ সংগঠনের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে । চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত সোনামসজিদ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগের সভাপতি সাদিকুর রহমান মাস্টার ও সাধারণ সম্পাদক সেনাউল ইসলাম মেম্বার আমাদের সংগঠনের কেউ নয় । আমরা তদন্ত করে দেখবো যদি এরা স্থলবন্দর শ্রমিক লীগের নাম ব্যবহারে থাকে তাহলে আইনগতভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সোনামসজিদ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সেনাউল ইসলাম মেম্বার জানান, আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ সঠিক নয় ।

এ বন্দরে শ্রমিদের নায্য পাওনার অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়না । কেউ হয়তো ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন